Tuesday, February 19, 2019

অমিত সরকারের কবিতা





সার্কাস  সার্কাস  

এক
গর্ভিণী উড়ান একদিন হঠাৎ যেভাবে থেমে যায় আচমকা রক্তপাতে, একদিন তুমি দেখবে সমস্ত স্বর, ব্যঞ্জন এবং যতিচিহ্ন   ঠিক সেভাবেই তোমাকে ছেড়ে শুয়ে আছে ফ্যাকাশে মেঝেতেতোমার সমস্ত অবিশ্বাস সেদিন জমতে জমতে পাথরগান ধ্বংসজল এগোতে এগোতে ঢেউ হয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে পায়ের পাতা। কাঁচা রক্তের গন্ধ উড়ে যাচ্ছে জলপাইপাতাদের দীর্ঘ  নিশ্বাসে। তোমার হতবাক ক্লোরোফিল তীব্র শুষে নিতে চাইছে খাঁচার বাইরের যাবতীয় সুসংবাদ। তবু ভুল গ্রহের সবুজ  চ্যাটচ্যাটে আলো ক্রমাগত গড়িয়ে পড়ছে তোমার উরুসন্ধির যন্ত্রণা বেয়ে বেয়ে...    

দুই  
এভাবেই সাঁতার, এভাবেই জোড়কলম, এভাবেই চু কিতকিত খেলতে খেলতে রাত সাড়ে দশটায় টিভি চ্যানেল। পুরনো  চেকবই দেখলে মনে পড়বে কতদিন আগে কাকে যেন ধার দিয়েছিলে নিজস্ব দক্ষিনের জানলা এভাবেই শ্যাওলা ধরা জলের বোতলের স্বপ্নে সমুদ্রের লাইব্রেরী। এভাবেই তোমার সমস্ত তেষ্টা মানে অরিজিত সিং, ইমনের জ্বর। ডাকিনী মুদ্রায় শুয়ে  ট্রামলাইন তোমাকে ডাকবে নিজস্ব বিছানায় নিশ্চুপ অক্ষরের শুশ্রূষা ঝরে পড়বে তোমার হাতে গিঁথে থাকা  স্যালাইনের ছুঁচে। তুমি  কিন্তু  খাঁচা ছেড়ে বেরোতে পারবে না। আর তোমার জন্যে একের পর এক ব্লাইন্ড কল দিয়ে যাবে  বৃষ্টিমেঘ।                 

তিন
লিখতে লিখতে নুয়ে পড়েছে রক্তমাখা আঙুল। গভীর ক্ষতের মধ্যে দিয়ে দেখা যাচ্ছে ভেতরে একটাও হাড় নেই, শুধু রঙিন   প্লাস্টিকের ফুল সাজানো। ওদের পাশ কাটিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তোমার সামনে একটা সবুজ ঝর্না। মুখ ডুবিয়ে জল খাচ্ছে  সারি সারি সেলফিরাএকটা বকফুল গাছের পাশে শুয়ে কবেকার স্কুলব্যাগ, ছাড়া চটি। দূরে সার্কাসের বিজ্ঞাপন বেজে উঠছে রিকশার  মেগাফোনে।  দৌড়োতে দৌড়তে তুমি কুড়িয়ে নিচ্ছ গোছা গোছা রঙিন হ্যান্ডবিলআর একটা কাটা ঘুড়ি  তোমার দিকে ভাসতে ভাসতে। এভাবেই কালসাপ, এভাবেই নিস্তরঙ্গ বাসরঘর, ভেতরে ফণা তুলছে কখনো কখনো...।     

চার
যে বাঘ খাঁচায় জন্মেছে তার কোন ভোটাধিকার নেইতার গেরস্থালী মানে মরা শালপাতাদের পাসওয়ার্ড। হাতে হাতে চালান  হয়ে যাওয়া দেবতাদের লাশ। তবু কে যেন মাঝে মাঝে কাটাকুটি করে চলে যায় তোমার এই সাদা পাতার ওপরে? তুমি  মনে  মনে জানো এই অন্তরাটুকুও হাইফেন দিয়ে জোড়া হিংস্রতার সঙ্গে। বারান্দার এই কাহিনীবিন্যাস তুমি      যতবার লিখেছ, তার  চেয়ে  বেশিবার তোমার গর্ভপাত হয় নিতবু নিজের আঙুল চিবিয়ে খেতে খেতে তুমি খুশি হয়ে  উঠছ রক্তের স্বাদে। আর লাথি মারছ থালা ভর্তি ঠাণ্ডা ভাতে। খাঁচার বাইরে থেকে একফালি রোদ্দুর আর সবুজ গন্ধ  তোমাকে অনবরত খোঁচাচ্ছে  আর ছিঁড়ে নিচ্ছে তোমার অন্যমনস্ক লোম।
      
পাঁচ  
জোকারের লম্বা টুপির অন্ধকারে লুকোনো আছে নিরুপদ্রব একটা ঘুমকিন্তু তুমি একটা আলো, একটা জাল, একটা  স্যাক্সোফোনের ঝম  করে  বেজে ওঠার মধ্যেও ক্রমাগত শান দিয়ে চলেছ নিজের নাড়ি ছেঁড়া নখে। লোকে বলছে ওই  খাঁচার মধ্যে ঈশ্বর শুয়ে আছেন। একটা অন্ধ  কাক উড়ে আসছে জন্মান্তরের ওপার থেকে। চকচকে পোশাক বদলে নিচ্ছে  আবহমান। চারপাশে ছয়লাপ লোক, আলো, মাংসের কাঁচা গন্ধ, রাগী কালপুরুষ। ঘেরাটোপের মধ্যে এইবার চাবুক নিয়ে   ঢুকে পড়বে রিংমাস্টার। তুমি ও সে এখন মুখোমুখি...    


No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"একটা কথা আমি বলি। আমরা অনেকগুলো জিনিস খবরের কাগজে দেখি। সারফেসে দেখি, তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যাই। আমাদের আর কিন্তু প্রভাব...