মাও
সেতুং এর কবিতা
মাও
সেতুঙ-এই নামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার কোনো প্রয়োজন নেই। চিনদেশ তথা
বিশ্বের সর্বকালের সেরা বিপ্লবীদের মধ্যে অন্যতম তিনি। যেটুকু বলার তা হল, চিনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব পালন করতে করতে
মুক্তিসংগ্রামের প্রবল ঝঞ্ঝার ভেতর দাঁড়িয়েও তিনি কবিতা লিখতেন। এবং সেই কবিতগুলি
একেবারেই শ্লোগান হয়নি বরং উচ্চমানের কবিতা হয়ে উঠেছিল। আসলে তাঁর কবিতাগুলি
একেকটি গান বা গীতিকাব্য। চিনের পরিচিত লোকসংগীতের প্রেরণায় মাও এই গীতিকবিতাগুলি
লিখেছিলেন, যাতে নিরক্ষর সংগ্রামী জনতা সেগুলি গাইতে পারে। ফলে তাঁর কবিতাগুলি
গণগানে পরিণত হয়। এবং গোটা চিনে বিপুল খ্যাতি লাভ করে।
বিশ্বের
অনেক খ্যাতনামা কবি মাও সেতুঙের কবিতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। আমাদের বাঙলাদেশের কবিরা, বিষ্ণু দে, অমিতাভ
দাশগুপ্ত, কমলেশ সেন, অরূপ চন্দ্র, প্রতুল মুখোপাধ্যায় সহ আরো অনেকেই তাঁর কবিতার বাংলা তর্জমা করেছিলেন। আমারও
সামান্য কয়েকটি প্রচেষ্টা রইল তার পাশাপাশি।
--- মৃন্ময়
চক্রবর্তী
১.
হলুদ সারস মিনার
(Yellow crane tower)
-- to the tune of pu as man
Spring, 1927
___________
দূরে দূরে
নয়টি ঝরনা
মাটির উপর দিয়ে বয়ে চলেছে,
উত্তর থেকে দক্ষিণ
চারদিক আচ্ছন্ন করা
ঘন কুয়াশার ঝাপসা বৃষ্টি।
বিরাট নদীতে কচ্ছপ আর সাপ
পরস্পরকে জাপটে ধরে রেখেছে।
"
হলুদ সারস চলে গেছে
কোথায় কে জানে!
কেবল মিনারটা রয়ে গেছে একা
দর্শনপিপাসুর আসা যাওয়ার জন্য
আমি উৎসর্গ করেছি আমার পানীয়
ফুলে ওঠা তীব্র স্রোতের কাছে
আমার হৃদয়ের জোয়ার ফেঁপে উঠছে
ঢেউয়ে ঢেউয়ে।
২.
চিঙকাঙশান
(Chingkangshan)
--to the tune of Hsi Chiang Yueh, Autumn 1928
_______
পাহাড়গুলোর নীচে
আমাদের পতাকা উড়ছে,
আমাদের ড্রাম আর বিউগল বাজছে
পাহাড়চূড়োয়।
শত্রুরা আমাদের চারদিকে বেষ্টনী তুলেছে
হাজারে কঠিন,
আমরা দাঁড়িয়েছি
নিজেদের জমিতে অদম্য।
ইতিমধ্যেই আমাদের প্রতিরক্ষা
তৈরি লৌহপোষাকে
এখন আমাদের সংকল্পগুলো
দূর্গের মত একজোট।
হুয়াংইয়াংচি থেকে গর্জন করছে
আগ্নেয়াস্ত্র, বজ্রের মত।
খবর এসেছে
অন্ধকারে পালিয়ে গিয়েছে শত্রুদল।
৩.
তাপোতি
(Tapoti)
-summer,1933
লাল, কমলা, হলদে,
সবুজ
নীল, বেগুনি, আকাশি:
কে নাচে ওই রামধনুকের
সঙ্গে
ওড়ে কার হাসি?
বৃষ্টি থামে, সূর্য ঢালু রোদ নামে:
পাহাড়ি পথ
নীলচে লাগে ডাঁয়-বামে।
কী ভয়ানক যুদ্ধ
গেছে এই বছর:
গাঁ-দেয়ালে হাঁ বুলেটের গা-গতর।
বেশ সাজানো চোখ
ধাঁধানো ওই পাহাড়,
আজ যেন তার ঢের
বেড়েছে রঙবাহার।
৪.
লিউপান পর্বত
(Mount Liupan)
--To the tune of Ching Ping Yueh - October 1935
অনেক উঁচু আকাশটা আর মেঘদের রঙ ধূসর
দেখছি আমরা বুনো রাজহাঁস দক্ষিণে যায় মিলিয়ে
চীনাপ্রাচীরটা ছুঁতে না পারলে আমরা মানুষই
নইতো
ইতিমধ্যেই বিশসহস্র লি পথ মেপে তো ফেলেছি
লাল পতাকারা উঁচু লিউপান পাহাড়ের ওই শিখরে
মুক্তির স্বাদে পশ্চিমি ঝড়ে মহা আনন্দে
দুলছে
আমাদের হাতে ধরাই রয়েছে এই যে দীর্ঘ দড়িটা
কখন যে ওই ধূসর ড্রাগন আমরা কব্জা করব?
৫.
নারী মিলিশিয়া
(Militia Women)
ফোটোগ্রাফের উপরে লেখা উৎসর্গপত্র
-- to the tune of a chueh chu - February 1961
কাঁধে পাঁচফুট ঝুলন্ত রাইফেল, বড়ই
সাহসী মুখগুলো ঝলমল
প্যারেডের মাঠ মেতেছে প্রথম আলোয়, দিনের শুরুতে টলমল
টলমল
চীনা মেয়েদের রয়েছে কিন্তু দারুণ, গরবে
সটান উঁচু অভিলাষী মন
ভালোবাসে তারা সমর পোশাকে সাজতে, ফেলে রেখে সব পশমের
আবরণ!
৬.
কুল ফুলের
গান
(Ode to the palm blossom)
--to the tune of Pu Suan Tzu--December
9,1961
(লু উ-এর 'কুল ফুলের গান' পাঠ
করে আমি এই কটি পঙক্তিমালায় তার বিপক্ষতা করি)
হাওয়া আর বৃষ্টি
বিদায়ী বসন্তকে ঘিরে রেখেছে,
উড়ন্ত তুষার
ফিরতি বসন্তকে জানাচ্ছে স্বাগত।
বরফ-কাদা জড়ানো পাহাড় চুড়োর খাড়াই শিয়রে
একটি ফুলের কুঁড়ি
ফুটেছে সরল-সুন্দর।
সরল-সুন্দর সে, বসন্তের
কাছে কেবল নিজের জন্য প্রার্থনা করছে না,
বরং বসন্তের দূতেদের
ভেতর সেও একজন।
যখন পাহাড়ি
ফুলেরা সবাই পাপড়ি মেলে দেবে
সে তখন তাদের
ভেতরে মিশিয়ে রাখবে তার হাসি।
**
অনুসৃজন
: মৃন্ময় চক্রবর্তী
No comments:
Post a Comment