প্রপিতামহের
আলো
১.
ঢাকি ঘোর অমাবস্যা, তবু মনে কৃষ্ণরূপ দম্ভ হয়ে ফোটে,
ফেটে যায়
ছড়ায় চতুষ্পার্শে অন্ধকার, দাঁত নখ হিংস্রতা, ঘিলুতে
কিলবিল করে পাপ
কোনো গ্রহশান্তিদোষ ঠেকাতে পারে না এই রাক্ষসলগ্নের
মহাবৃষ
বায়ুতে বাঁশুরী বাজে, অবদমনের ফনা গুটিয়ে ঝাঁপিতে রাখি,
হে প্রেম…
২.
এ পথ যেখানে গিয়ে শেষ হয়, সেইখানে, কদমতলার আশ্রম
ভিখিরির চতুরতা বাউলের আত্মায় মেশানো এক গেরুয়াভুবনে
সাধনসঙ্গিনীর স্তন নক্ষত্রের মতো জ্বলে নিভে গুরুবন্দনায়
মেতে ওঠে
এ পথ আমাকে ডাকে অরূপের রূপে ধীরে দেহতত্ত্বে নিশুতিবিলাসে…
৩.
আগুন নিভন্ত হলে, বাঁ হাতে হাপর ঠেলে উত্তপ্ত করে তোলা
তোমার স্বভাব
সংকেতবাহিত পেশি, আহার কাঙ্ক্ষিত ক্রোধে অস্ত্র উজ্জ্বল
করো আঘাতে আঘাতে
ধ্বনির মাধুর্য ভেঙে কঠিন ধাতুর তেজ দুমড়িয়ে বহিরঙ্গে
অবয়ব দাও
আগুন অস্ত্র পেশি হিমঘ্ন কুঁকড়ে যায়, ঘরে ফিরে সন্তানের
শিরে চুমো খেলে…
৪.
হস্তচালিত তাঁতে সুতোরাও শুয়ে পড়ছে পরস্পর আড়ে ও বহরে
মাকুর ঘর্ষণশব্দ, টানা ও পোড়েন, কার্পাসতুলোর মৃত্যু
শারীরিক ক্রোধে
এছাড়া তাঁতির মন, হস্তপদ সঞ্চালন, খিদে ও শ্রমের স্বেদে
নির্মিত শাড়ি
সফল সঙ্গমকালে কত অনায়াসে তুমি দুইপায়ে দূরে সরিয়েছো!
৫.
নিহত পাখির মতো পড়ে আছি বন্ধুনীর খামারবাড়িতে, ডানাভাঙা
ঝড়ে না ইলেক্ট্রিকে, নির্ণয় করতে পারোনি, তবু, পাশ দিয়ে
যেতে যেতে
‘ইস্’ বলে থেমে যাও, শিস বাজে অতীত স্বভাবে। পালক শক্ত,
তাই
ডানা ধরে প্রাচীরের বাইরে ছুঁড়েছো, তবু, শিস বাজে, গোপনে
গভীরে…
৬.
ঘন ও নিশুতি রাতে তোমার শরীর খুব সন্দেহপ্রবণ মনে হয়
অন্ধকার স্থির হলে অপরাধপ্রবণতা জাগে, ঝিঁ ঝিঁ শব্দে
কাঁপি
গোপনে খুনের পর তোমার শরীরে কিছু চিহ্ন ফেলে আসি
শনাক্তকরণ পর্বে সেই সাক্ষ্য হোক আমার অপরাধ প্রমাণের
ভাষা…
৭.
তোমার শরীর থেকে যে রহস্য উর্বর মৃত্তিকায় নামে, তার
স্নেহে রেখেছি প্রনাম
গভীর স্পর্শ পেয়ে শিকড় নেমেছে জলতলে, অনির্বচন মাঠ হয়েছে
সবুজ
আকাশগহ্বর থেকে প্রপিতামহের আলো সারারাত অনন্তধ্বনিতে
ঝরেছে
কৃষক লাঙল দেয়, প্রক্রিয়া শেষ হলে, কাহিনি পরম্পরা তুলে
আনে ঘরে।…
৮.
সর্ষেক্ষেতের থেকে প্রজাপতি উড়ে গেলে ভাবি, ঘটে গেছে
পরাগমিলন
এরপর শস্য এলে ঝরবে হলুদ আর ভারি হবে গাছের স্বভাব,
শেষে
উপড়ে নিংড়ে পিষে ব্যবহার করে নেবে সম্পন্ন চাষী। পুঁতে
দেবে তিল
গায়ে হলুদের দিনে, তোমাকে সংকেত দিই। হা হা। এসব ঘটনা
তুমি জানো…
৯.
ভাঙাচোরা যে মানুষ চোখের জলের স্রোতে ঘট ভ’রে রাখে
তাকে দিই আম্রপত্র, ফুলফল, উপচার, বলিপ্রদানের খড়্গও
বিশুদ্ধ নির্ঘন্ট মেনে সে যখন যাগযজ্ঞে বসে, ধুনো জ্বেলে
ধোঁয়া দিই
জাগ্রত হয়ে ওঠে, খড়্গ ঘুরিয়ে নাচে মহাকালভৈরব রূপে!
১০.
শরীর ভাস্কর্য, তার শিরা ও ধমনীস্রোতে সেতারের মুগ্ধ
আলাপন
শীতের রোদ্দুর মেখে দুয়েকটি চড়াই তার নিস্পৃহ ঘাড়ে এসে
বসে
আমি, তার গভীরে প্রবেশ ক’রে যতবার পাঠ নিতে যাই, তত
দেখি
ভেতরে মাদল বাজে, ধানগান, শস্য তোলার পর তুষুভাসানের
উৎসব…
No comments:
Post a Comment