সৈনিক
২.০
নীলবাহাদুর হলে হয়তো এতক্ষণে তীরবল্লম
উপেক্ষা করেই নেমে পড়ত বসতিতে।সেভাবে ভাবলে বিশ্বম্ভর গোস্বামীরও একটা বিশাল বপু
আছে অনেকটা নীলবাহাদুরের মতোই।আছে একটা শুঁড় আর এক জোড়া কান।তবু বিশ্বম্ভর নামতে
পারলো না জমিতে।আর যাই হোক,শুধু শৌষ্ঠব দিয়ে তো আর সৈনিক হয় না।বকুলপুর রেল
পুলিশের অফিসে সে বদলি হয়ে এসেছে দুই মাস হলো।এরই মধ্যে যাতা কান্ড চলছে।মেয়ে তুলে
রেপ,ধর্মের দোহাই দিয়ে খুন,মহোৎসবপালনের উদ্দেশ্য দেখিয়ে তোলা আদায় ।বিশ্বম্ভর
দেহে বিশাল হলেও তার পোস্ট অতো বিশাল নয়।সামান্য কনস্টেবল।এইসব ঘটনা রেলপুলিশের
আওতায় নয়।তাই ফেসবুকে পড়া ছাড়া কিছুই করার নেই।কিন্তু সেইদিন চার বছরের নিখোঁজ
বাচ্চা মেয়েটাকে প্ল্যাটফর্মচত্বরে ঘোরাফেরা করতে দেখে বড়বাবু যখন তুলে আনলেন
ঘরে,আর বাপমার নাম জিজ্ঞেস করার ছুতোয় নোংরামি করতে শুরু করলেন,তার মধ্যে
"নীলবাহাদুর "জেগে উঠল।কিন্তু ওই যে।ক্ষমতায় তো সে একটা কুনকি হাতিও
নয়,নীলবাহাদুর তো দাপুটে দাঁতাল ছিল।মেয়েটা সারারাত সাহেবের ঘরে রয়ে গেল।উঁ উঁ
কাঁদছে।কী করছে কে জানে হারামিটা।বিশ্বম্ভরের নাইট।গিয়ে কেলিয়ে দিয়ে এলে কেমন
হয়।তারপর?বুড়ো বাপমা,অসুস্থ বউ,আর স্কুলেপড়া ছেলে?কী হবে তাদের এই চাকরিটা চলে
গেলে?ভাবতে ভাবতেই বিশ্বম্ভর ফেসবুক খুলল।সেখানে "নীলবাহাদুর মাহাতো"
নামে একটা প্রোফাইল আছে তার।সাড়ে পাঁচশো বন্ধু ।এখানে একটা তেড়ে পোস্ট দিলে কেমন
হয়?ভাবতে ভাবতেই রাগ উগরে দিল সে।এটাও তো একটা জমি।শালা হারামি বড়সাহেবের
বাচ্চা।দেখ কেমন লাগে।একান্ন মিনিটে পঁচিশটা ইমোজি পেল নীল।আড়াই ঘন্টায় দেড়শো।মনটা
চনমন করছে তার।এই শীতের মধ্যেও ।
পরদিন সকালে মেয়েটার বাপমা খবর পেয়ে
গোরখপুর থেকে হাউমাউ করতে করতে ছুটে এসেছে বকুলপুর।বড়সাহেব একটা
"সেলিব্রেশন" কিনেছে মেয়েটার জন্য ।সামান্য খোঁড়াচ্ছে মেয়েটা।কেঁদেকেটে
চোখ ফুলে গেছে।মায়ের কোলে উঠেই ঘুমিয়ে পড়ল।ওরা বড়সাহেবকে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে হাজার
পাঁচেক মিষ্টি খাবার টাকা গুঁজে চলে গেল।বিশ্বম্ভর প্রোফাইল খুলে দেখল নীলবাহাদুরের
পোস্টে সাতশো ইমোজি আর দেড়শো কমেন্ট জমা পড়েছে।তাদের সকলের বক্তব্য সারমর্ম করলে
অভদ্র ভাষায় এটাই দাঁড়ায় যে এই সব অফিসারকে "পেতে জুতোনো দরকার"।
ঋণ।নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছোটগল্প
"সৈনিক "
No comments:
Post a Comment