Sunday, February 17, 2019

পিয়াস মজিদের গুচ্ছ কবিতা






গোলাপের নহবত

১.
ফুলপাহাড়ে যাত্রা তার; তূূণের টিলায়। লাল নীল চুমকির বিভায় গলছে যেদিকে মোমের প্রাসাদ। এই দিবসের ডানাভষ্মে গুপ্ত সেই হেমবর্ণ ঢেউ। গোল বাঁকা রাতের রেখায় জাগে ঘুম। এত এত নিশিমাংস-হাড় তবু সুসমাচার জঙ্গলেই সন্ধ্যামালতী যত। আর সব শুষে মেয়ে এক পুষ্পাগ্নির লাভা। কৃষ্ণলয়ে ফুটছে ধীরে মরণসুন্দর।

২.
প্রবুদ্ধ হাওয়ায় ওড়ে শ্রীময়ী সাপিণী। বনে মর্মরিত সবুজে সাত সন্ধ্যার অঙগার। চাঁদ থেকে জড়ো করা সূর্যবালির পাহাড় ঐ। সিন্দুকের জঙ্গল; স্বর্ণের গায়ে গজিয়ে উঠছে শ্যাওলা। শেফালির গন্ধবিষে মেঘ হয়, রোদনিখিল। চেনা অচেনা তারার কান্নায় রাত্রি ফেটে যায়। নাচের মৃত্যু আমি আর তোমার ঘুঙ–রের হাড়ে -কফিনের জন্মদিন লক্ষ হাজার
৩.
সন্ধ্যাস্নানের গোপন সুন্দর। ডুবে যাওয়া সূর্যের শোণিতে শোধিত নাচ। ওলো আজ লীলাবালি সই। বেণী খুলে দাঁড়িয়েছে অগ্নিবাঈ। চুলের ছায়ায় চুরমার জল। খরধুলোর ভৈরবী কোমল আর শাখা ভরা ফুল। প্রতিবুদ্ধের ধ্যান ফুঁড়ে কামকল্লোল শুরু। দগ্ধ রাতের ফেলে যাওয়া রক্তাক্ত কাঁচুলি এই...
   
৪.
জলের এই নীল নৃশংসতা; সমুদ্রশ্বাসের পাহাড় থেকে ভেঙ্গে ফেলা মেঘের খিলান; হননের সব সোৗধ পুষ্পাভা; কুঁড়ি ও পাতায় গড়ে ওঠা মৃত্যুর ভান্ডার সে । বনে আছে তোমার সবুজ নিরাময়। তিনদিকে কিছু রক্তচারী ব্রক্ষ্মা। পথের শেষে স্বর্ণনাদের ছায়া আর দাগ, ধ্বংসের আরাধনায় লাল হলুদ তারায় ঝিলিক। হিমছুরি ফুটেছে; মত্ত সেই দাদুরীর কংকাল ভাসে।

৫.
অমল পিয়ানোতে টুটাফাটা দিগন্তের শুশ্রূষা, পুষ্পপোড়া সমুদ্রপরী হাঁটে। ছাইসুরভির স্রোতে স্রোতে প্রহর সমাগত। তোমার নাচের সামনে অসহায় জাহ্নবী। হেমন্ত এমন আর রুদ্ধ সব হাওয়া; তবু উড়েছে আজ কৃষ্ণতা যত; পাষাণ-কোমল, সোমরসের পর্বতে অচিন সেই রাতের হ্রদ। প্রতিভোরে এখন তরঙ্গসন্ধ্যা...   
৬.
পানশালার ভেতরে সব নক্ষত্রসেবক। তারাই লোপ করেছে শঙেখর স্বর। অগ্নিগন্ধে মাতাল সে রক্তিম গোলাপ। রোদের গহবরে ছুঁড়েছি লঘুমেঘের ভার, পাথরে গুপ্ত গান সমুদ্রে ধেয়ে গেছে। পর্বতের শেষে সেই ময়ূরজঙঘার স্তূপ। আর মৃত্যুর সঞ্জীবনে সমস্ত জাগরণ লেখা, চন্দ্রস্বেদের প্রহর শুরু। স্বর্ণতরঙ্গে থৈ থৈ নিশিতন্ত্রী। ঘুমের গর্ভে তুমি হীরাফেনিল ভোর     

৭.
এমন নীল নদী, রিরংসার কূল, বিদ্যুতের ঢেউ। ডুবন্ত রাতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রভাতী তান। দূর ডাঙায় শ্মশানের সুবাসে নামে বসন্তবাহার। ঐ যে বাগিচা। ফুলের থাবায় কুমারী মেরি। থেকে থেকে গলায় পেঁচিয়ে উঠছে সন্ধ্যা। দূরের জংলায় সব হলুদ ধূসর। এত বিকেল, তেরছা পবন! তোমার রূপজনমের ভারে ধ্বসে পড়ছে প্রাসাদ; স্বর্ণমোড়া তিনদিকে আজ ধ্বংসনিখিল, দক্ষিনে শুধু সামান্য সবুজ। কালচক্রের এবার রাগমোচনের বেলা 

৮.
ঐ বায়ুভেলায় নগ্ন অগ্নিস্মৃতি। মিথ্যার অভিসার শেষে ফিরেনি তারা।  মৃত্যুসমুদ্রের মাল্লারা জনমের দামে নিয়ে গেছে মাৎসর্য, সেজুঁতি আর সব কাঁচের পুতিমালা। তটপোড়া গন্ধে তবু ফোঁট ফোঁটা সন্ধ্যা। ঘরে যায় মেয়ে;কলসভরা নাচ, মুদ্রাঘুমের শোক শুষে পাহাড়ের পিছে জাগি খুনি ঝর্ণা। রক্তজলের খাতা জুড়ে তুমি সত্যলেখা মুখোশের ঝড়।

৯.
সন্ধ্যামোচী বৃক্ষের অরণ্যে এই মৃত্যুকল্যাণ রাগ। গান থেকে ঝরে পড়ে সুরেলা রক্ত। বরফফলকে গলমান অগ্নি; রাতভর জড়ো করা স্বপ্নভাষা। গোলাপে পেঁচিয়ে উঠুক সাত রকম সাপ। আর নাশযজ্ঞের স্রোতে ভেসে যাবে ক্রুশের জঙগল। শ্বেত সব পাপের পরিখা ফুঁড়ে তার পর ঝিঁঝিটের ঝর্ণা। কুমারীর তৃষ্ণা বেঁচে ওঠে      

১০.
সুর শেষ; পাঁচ জোড়া ভূতের কন্ঠে পরীলুপ্তির গান, পুষ্পপটে আঁকা মেঘের মৃত্যুনকশা। বিনাশের নীল ক্ষুধায় লাল সবুজ চুমকি তুমি। জন্মের মার্জনা চেয়ে কবর ফুটে লক্ষ হাজার। কান্নায় কুলায় থেকে ঝরি রক্তশিখা রাত। আর পূরবীপরিখায় ভৈরবীর হাড়। তারপর ছোট নদী পাহাড় বাগিচা পরিযায়ী পাখির তনুপোড়া প্রহর জুড়ে সাড়ে তিন হাত মাটির সমুদ্র

No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"একটা কথা আমি বলি। আমরা অনেকগুলো জিনিস খবরের কাগজে দেখি। সারফেসে দেখি, তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যাই। আমাদের আর কিন্তু প্রভাব...