Sunday, February 17, 2019

রণজিৎ অধিকারী







পার্থিব

ভূমধ্যসাগর রাখা হয়েছিল ঠিক মাঝখানে আর পুব দিকে
সূর্যোদয় নিশ্চিত করতে পৃথিবীকে পশ্চিম থেকে পূর্বে
ঘোরাতেই হত। ছিল সামান্য কিছু ভুলচুক; আর তাতো
থাকতেই পারে প্রতিটি সৃষ্টিকর্মেই।...পৃথিবী ঠিক গোল
হয়ে উঠতে পারেনি কেন নারীরাই কেবল গর্ভবতী হতে পারে
কিংবা অল্প ক’টি প্রাণীরই আছে বোধবুদ্ধি…..

কিন্তু এসমস্ত ভুলত্রুটি ভুলিয়ে দেওয়ার মতো থাকল
মাইল মাইল আখ চাষের উর্বর জমি, মাটির অনতিগভীরের
সুপেয় জল, বিপুল খনিজ ভান্ডার তারও নীচে হীরকদ্যুতি..,
পাখির সুস্বাদু মাংস আর অশেষ রমণসুখ।

আমরা এসে দেখেছি, কিছু বলবার নেই,করবারও কিছু নেই
নিজের বরাদ্দটুকু টিপে বের করলেই চলে আর তা অনায়াসে
পুর্বপুরুষদের কাছেই শিখে নেওয়া যায়।
অবশ্য রাত্রির আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হতে বাধ্য,..
নক্ষত্রের ওই অত বিপুল আয়োজন বেশ ব্যয়বহুল আর
বাহ্য আড়ম্বর ছাড়া কিছু নয়!


আগস্ট বিষয়ে

আগস্টের দিনগুলোকে পেরিয়ে যেতে দেখলাম কেননা
তাছাড়া আর কিছুই করার ছিলনা যেভাবে
শরীর নিয়েও আমরা বিমূঢ় হয়েই থাকি আমৃত্যু।
সব দিনগুলোই আসলে একই কিনা কিংবা সমস্ত
নারীশরীরই রূপের সামান্য হেরফের কিনা

অথচ আগস্টও একেকদিন খুব ক্ষেপে গিয়েছিল,
কোনদিন সে ভিজে নেতিয়ে পড়েছিল রাস্তার পাশে,
এক প্রবল বর্ষণের রাত্রিতে সে আমাকে কামুক করে
পরেরদিন বিকেলেমেঘের ফাঁক গলে অস্তে যাওয়ার
ক্ষণে সে আমাকে করে তুলেছিল ভাবুক দর্শনে আগ্রহী।

দিনগুলো কেটে কেটে বানানোর সময় এই ভেদ কি
চোখে পড়েছিল কারুর কিংবা ধরুন শরীর, যৌবন…
ইত্যাদি: নিশ্চয় এর অনেক পরে আমাদের রুচিমতো
সব একটুআধটু ভিন্ন করে নেওয়া গেছে যেমন শঙ্খিনী,
পদ্মিনী...আগস্ট,মার্চ...রবিবার,বুধবার...।

এসব কি খুব হেলাফেলা করার বিষয়!

অনেক নীরবতার পর

অনেক নীরবতার পর আবার আমারা কথা বলতে পারব।

আমরা কি আজও বুঝিনি নৈঃশব্দ জমে জমে পাথর হয়েছে!
নক্ষত্রেরা কথা বলে না, তারা কি চিরদিনই বোবা?
কিংবা অনেক বাচালতার পর তারা অমন জমাট স্তব্ধীভূত!
অত অত নীরবতার সঞ্চয় নাক্ষত্র বুক
                                         বিদীর্ণ করে দেবে কোনোদিন।
তখন আবার তারা পরস্পর কথা বলবে।
কথা মানে তো শুধু ছড়িয়ে পড়ার আকাঙ্ক্ষা—অন্যের দিকে।

আমরাও ক্রমে পাথর হতে হতে একদিন বিপুল বিষ্ফারণে
                                                                     জেগে উঠব
আর পেঁজা তুলোর মতো অবিরল কথা বলতে থাকব।



কিছুতো ঘটবেই

পাথরগুলো তার নীরবতা ভেঙে বেরিয়ে আসবে;
ইলেক্ট্রনগুলিও তাদের ছেলেমানুষি ছেড়ে একদিন
সত্যি প্রাণ পেয়ে যাবে; কিছু তো ঘটবেই।
এই বিস্তর ছায়াঘনপথের দিকে তাকিয়ে বোঝো
এত এত আয়োজন আন্দ্রোমিদা ব্ল্যাক আইদের,
এত কোটি কোটি বছরের নীরবতা বিফলে যাবে!
কোন অঙ্গুলিহেলনে ওদের চুপ করে যেতে হল,
কী পাওয়ার আশায় তাদের ঘুরে মরতে হল এতদিন—
তারা একদিন নিজেরাই বলতে পারবে জমে থাকা
সেইসব অবাক কথা।

আমরা সেদিন শুনতে পাব? দেখতে পাব সেই
আশ্চর্য মুক্তির উচ্ছ্বাস?


মহাদেশ

শুধু পাথর, গাছপালা, নদী, পাহাড় দিয়ে
এক একটি মহাদেশ বানানো গিয়েছিল।
ভেবোনা—সেখানেও আমাদের ভূমিকা ছিল,
আর আমাদের ভালোবাসা বা ঘৃণার!
কবিতা যেভাবে বদলে যায় কিংবা গান;
মহাদেশও ভেঙে যায়,সরে পড়ে যে যার।
স্মৃতিকাতরতা প্রমাণ করে আমরা নিঃসঙ্গ, পরিত্যক্ত
ভালোবাসার থেকেও। ভেবেছি আমাদের ভালোবাসা আর
সঙ্গমেই ভূমি কেঁপে উঠেছে বারবার কিন্তু
যেসব কম্পন মহাদেশ তৈরির আগেকার
সে বিষয়ে আমরা কিছু ভাবিনি। শুধু ভেবেছি,
আমাদের ক্ষমতা কিংবা ত্যাগ, ভালোবাসা কিংবা লোলুপতা দিয়ে
এক এক মহাদেশ হাজার হাজার বছরের; কিন্তু
লক্ষ কোটিবছর আগেকার মহাদেশ!
আমরা এসে পড়ার কত আগেই না
শুধু পাথর, গাছপালা, নদী, পাহাড় দিয়ে…






No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"একটা কথা আমি বলি। আমরা অনেকগুলো জিনিস খবরের কাগজে দেখি। সারফেসে দেখি, তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যাই। আমাদের আর কিন্তু প্রভাব...