এ পরবাসে রবে কে!
বাঙালি হিসেবে চাপে পড়ে যাই কখন জানেন? যখন ৪২ দিন অ-বাঙালিদের
সংগে থাকতে থাকতে টের পাই, মনের যে কোন ভাব প্রকাশে বাংলায় যা কিছু ভাবি, তা কতটা
অননুবাদনীয়! মনের ভেতরের কলকব্জা কতটা যে বাঙালিগন্ধী, তাকে অন্য ভাষায় নিয়ে আসা
এক অসম্ভব ব্যাপার।
বিষয়টা গৌরবেরই। ভাবনা-ভাষার দৈন্য নেই, ছিল না, যদি দৈন্য কেউ এনে
থাকি তা আমরাই নিজ পায়ে কুড়ুল মেরে। কেননা দৈনন্দিন ব্যাপারে আমাদের যা কিছু ভাবনা
কথা তার অর্ধেকটা যে কবিতা বা গান থেকে উদ্ধৃতি, বা প্রবাদ প্রবচন বাগধারা, একঅসীম ঐশ্বর্য ময় বাংলা সংস্কৃতি। আর তার মধ্যে আবার আশি
শতাংশ ই রবি ঠাকুর নির্ভর।
উদাহরণ দিলে ব্যাপার টা স্পষ্ট হবে। ধরা যাক রবিবার সকালে সবারই
মুখভার, বেরনো যাবে না কারণ টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়েই চলেছে, বাঙালির মন বলল, আজ
কিছু তেই যায় না মনের ভার, দিনের আকাশ মেঘে অন্ধকার।
অনুবাদ অসম্ভব। চলো ইয়ার কুছ খাতে হ্যায়। বলে ম্যানেজ করলাম, বিহারি ডিম ফেটাতে বসল আর দক্ষিণী ভাত পোড়ি পুলিয়াজারে পাউডার মিশিয়ে শুদ্ধ ঘি খুঁজল। আমার মন বলল, বাসনার সেরা বাস রসনায়। খাওয়া চলতে চলতেই ভাবা গেল যে এখন ভারতে সরস্বতী পুজো, মন বলল, ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত। খাবারে ছিল না চাটনির স্পর্শ, তাই বেজায় দুঃখ পেয়ে ভাবলাম, খিচুড়ি কুলের চাটনি এবার মিস। আমার একূল ও কূল দু কূল গেল। তাপ্পর খেয়ে উঠে আঁচাতে আঁচাতেই বললাম, ভাতঘুম চাই জমিয়ে। কে বোঝাবে ভাতঘুম ইহাদের?
অনুবাদ অসম্ভব। চলো ইয়ার কুছ খাতে হ্যায়। বলে ম্যানেজ করলাম, বিহারি ডিম ফেটাতে বসল আর দক্ষিণী ভাত পোড়ি পুলিয়াজারে পাউডার মিশিয়ে শুদ্ধ ঘি খুঁজল। আমার মন বলল, বাসনার সেরা বাস রসনায়। খাওয়া চলতে চলতেই ভাবা গেল যে এখন ভারতে সরস্বতী পুজো, মন বলল, ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত। খাবারে ছিল না চাটনির স্পর্শ, তাই বেজায় দুঃখ পেয়ে ভাবলাম, খিচুড়ি কুলের চাটনি এবার মিস। আমার একূল ও কূল দু কূল গেল। তাপ্পর খেয়ে উঠে আঁচাতে আঁচাতেই বললাম, ভাতঘুম চাই জমিয়ে। কে বোঝাবে ভাতঘুম ইহাদের?
একটু পরেই ঝকঝকে রোদ্দুর উঠল। অমনি বলে ফেলতে গেলাম, মেঘের কোলে
রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি। কী জ্বালা। বললাম ছাতা লেকে নিকলতে হ্যায় মওসম আচ্ছা
হো গিয়া!
অডিটি কাগজ দিচ্ছে না, মাথা গরম। ভাবলাম, হুঁ হুঁ বাবা ঘুঘু দেখেছ
ফাঁদ দেখনি। অনুবাদ হবে না।
আমার টিমের লোকেদের ওপর খুব রাগ হচ্ছে, ভাবলাম, ইচ্ছে করে এই
ব্যাটাদের গোঁফ ধরে খুব নাচি,/মুখ্যুগুলোর মুণ্ডু ধরে কোদাল দিয়ে চাঁচি।.. অথবা
কাউকে বেশি লাই দিতে নেই সবাই চড়ে মাথায়।
উফ আবার ক্যোটেশন! সুকুমার রায়।
...
বলছি না যে অন্য ভাষায় এসব থাকেনা। সবার মাতৃভাষায় এমন সব জানালা
দরজা আছে যা দিয়ে পালানো যায়। যা আমাদের মায়ের কোল ফিরে দেয়। দুই তামিলিয়ান দেখা
হলেই তাই হড়বড় করে মাদ্রাজীমার্কা কথা বলে নেয়। অথবা উর্দুভাষী রা তাদের নিজ
মুদ্রায় নিজস্ব ভাষায় খানিক রসিকতা করে নেয়।
মাতৃভাষা আমাদের গোপন খুপরি খোঁড়ল ভাঁড়ার সঞ্চয় লুকোবার জায়গা।
দাঁড়াবার জায়গা।
চমৎকার
ReplyDelete