সূর্যমুখী
জন্মের
ঠিক পরেই মাকে হারিয়েছে বুবকা। ওর বয়স এখন সাত। সদ্য ক্লাস ওয়ান। মায়ের স্মৃতি ধরে
আছে অ্যালবামে সাজানো ঢালাও ছবি, কয়েকটি ব্যবহৃত চিরুনি, সিঁদুরকৌটো, চুলের কাঁটা,
সাজগোজের আরো কিছু জিনিস আর মেরুন রঙের একটি ছোট চামড়ার ডায়েরি। গোটা গোটা কালো ভ্রমর
অক্ষরে ডায়েরিতে আঁকা এক সদ্য পরিণীতা মেয়ের প্রথম শ্বশুরবাড়ি আসার কথা, নতুন এক জগতের
অংশ হয়ে ওঠার প্রাথমিক আনন্দ, অনুসারী টানাপোড়েন, ছোট বড় টুকরো সারাৎসার, ছেলেমানুষী,
তীক্ষ্ম অভিমান, প্রথম সন্তানধারণের তীব্র পুলক। চাইলেও এ ডায়েরি বুবকার হাতে আসেনা।
বাবা বলে, আরেকটু বড় হলে ডায়েরিটা ওকে একেবারে দিয়ে দেবে। কত বড়? ক্লাস সেভেন-এইট?
না আরো পরে? বাবা নিরুত্তর! এই ডায়েরির সামান্য অংশই বুবকা শুনেছে। মান্তুপিসি পড়ে
শুনিয়েছিল একবার। বাবা বাড়ি ছিল না। যতদূর মনে পড়ে গরমের ছুটিতে, কোনো এক শনিবার...
"...পেটের
মধ্যে ওর নড়াচড়া টের পাচ্ছি গতকাল থেকে। মনে হয় ছোট ছোট পা-দু'টো অস্থির হয়ে আছে ফুটবলের
জন্য। ও-কে বলা হয়নি। আজ বলব। এত রাত করে বাড়ি ফেরে! শুনে খুশি হবে?..."
কম্পিউটারে
সূর্যমুখী ফুল দেখে বুবকা। জুম করে। বড় হয়ে ধরা দেয় পাপড়ি, তার ভিতরকার অমিত পরাগ-সম্ভাবনা।
নিচে ডানদিকে শিল্পীর নামসহ ছবির টাইটেল ছোট করে লেখা। বুবকা কষ্ট করে পড়ে।
'দি
সানফ্লাওয়ার' বাই ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ!
ফুলটির
ভিতর কী জানি কীভাবে, হঠাৎ একটি মা খুঁজে পায় বুবকা। দেখতে পায় তার নরম হলুদ কোল। পৃথিবীর তাবৎ মা-হারা ছেলেমেয়ের সাথে যেন অস্ফুট
আলাপ হয় সেখানে, ঐ ফুলের পেটের মধ্যে। চোখ বড় করে, পাতা না ফেলে তাকিয়ে থাকে একটানা...যতক্ষণ
না চোখ শুকিয়ে আসে হাওয়ায়...
যার
কিছু হারিয়ে যায় পুরোপুরি, সে কি নিজের অজান্তেই ধীরে ধীরে ভ্যান গঘ হয়ে ওঠে? সূর্যমুখীর
বিশাল ডানার নিচে শুয়ে নিজের নাম লিখে দেয় ছোট্ট করে?
বুবকা
ভাবতে থাকে...
No comments:
Post a Comment